Click the image to explore all Offers

প্রবন্ধ ।। সবুজ বিপ্লবী স্বামীনাথন।। পাভেল আমান


 ছবিঋণ - ইন্টারনেট।

  সবুজ বিপ্লবী স্বামীনাথন

 পাভেল আমান 

 

বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব ও কর্মকাণ্ডের অধিকারী স্বামীনাথনের জীবনযাত্রা ভারতবর্ষের কৃষিকে করে তুলেছে আত্মনির্ভরশীল বিজ্ঞানসম্মত। সারা জীবন অতিবাহিত করেছেন ভারতবর্ষের কৃষি ব্যবস্থাকে অর্থকারী ও উৎপাদনশীল করে তুলতে । স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতবর্ষকে খাদ্যে স্বনির্ভর ও সুনিশ্চিত করে তুলতে স্বামীনাথনের অবদান চিরস্মরণীয ও অবিসংবাদিত। প্রধানত তার প্রচেষ্টাতেই ভারতবর্ষ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করে সমাজ ব্যবস্থায় এক প্রভূত বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে। ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা তথা অর্থনীতির মূল ভিত্তি যেহেতু কৃষি  - সেজন্য আর্থ সামাজিক উত্তোরণ ঘটাতে গতানুগতিক কৃষি ব্যবস্থাকে পাল্টে দিয়েছিলেন। ভারতের সবুজ বিপ্লবের কারিগর বিখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথন। তাঁর হাত ধরেই ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব এসেছিল। কৃষক এবং কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনে আমূল বদল আনার কারিগর তিনি। দীর্ঘদিন কৃষি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মূলত মিশ্র চাষ, চাষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার, ফসলে শংকর প্রজাতির ব্যবহার নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা করেছেন তিনি। ধানের নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কারের জন্য গোটা বিশ্বে স্বীকৃত স্বামীনাথন। ছয়ের দশকে যে সবুজ বিপ্লব ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থা তথা সার্বিকভাবে ভারতের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছিল, সেটিও মূলত তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। স্বামীনাথনকেই ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক বলা হয়। ভারতের কৃষিতে উন্নতির জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন স্বামীনাথন। ভারতীয় কৃষিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার, উপযুক্ত সেচ পরিকাঠামো, কীটনাশকের ব্যবহার সহ একাধিক দাবি নিয়ে বিখ্যাত মার্কিন কৃষিবিদ নরম্যান বোরলগের সহযোগিতায় বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওই বিপ্লবকেই সবুজ বিপ্লব বলা হয়। যার প্রভাব সব থেকে বেশি পড়েছিল পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায়।১৯৪৯ সালে কৃষিতে আলু, গম, ধান এবং পাট নিয়ে গবেষণা শুরু করেন স্বামীনাথন। ভারতের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার দেশে খাদ্য চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনেন।সবুজ বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়ার পর ১৯৭৯ সালে কৃষিমন্ত্রকের মুখ্যসচিব হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। আবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চের ডিরেক্টর জেনারেল পদেও ছিলেন। ১৯৮৮ সালে 'ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ কনজারভেশন অফ নেচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সে'র সভাপতি পদেও কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর।নিজের কাজের জন্য একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন বরাবর প্রচার বিমুখ কর্মনিষ্ঠ আপন লক্ষ্যে অবিচল। আমৃত্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন।তাঁর প্রয়াণে কৃষি বিজ্ঞান গবেষণা ক্ষেত্রে বিরাট শূন্যতা তৈরি হল। ভারতীয় কৃষি বিজ্ঞানে ও কৃষিকে আধুনিক লাভজনক ও স্বাবলম্বী করে তুলতে তার অবদান চিরস্মরণীয়। আসমদ্র হিমাচল স্বামীনাথন রয়ে যাবেন প্রতিটি ভারতীয় মননে তার মহান কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। বর্তমান যুবসমাজ তার চিন্তাভাবনা ও জীবন দর্শনকে প্রাত্যহিক জীবনে এগিয়ে চলার মন্ত্র হিসাবে স্মরণ করুক । পরিশেষে তিনি শুধু একজন সমাজ বিপ্লবী নন তিনি চর্চিত হবেন একজন প্রকৃত সমাজসেবী দূরদর্শী সর্বোপরি দেশপ্রেমী হিসেবে।প্রকৃতার্থে স্বামীনাথন ছিলেন দেশের প্রতি নিবেদিত প্রাণ ভারত মাতার যোগ্য সন্তান। 
===========================

 

রচনা -পাভেল আমান -হরিহরপাড়া- মুর্শিদাবাদ

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.