গল্প ।। মেয়েটি ও ছেলেটি ।। আরজু মুন জারিন
মেয়েটি ও ছেলেটি
আরজু মুন জারিন
মেয়েটি অতি সাধারন ঘরের । যেটুকু ধন থাকলে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত ঘরের বলে চালিয়ে দেওয়া যেতে পারতো তার চেয়ে দরিদ্র পরিবারের । নিজের ঘরে এক বেলার আহার শয়নের বিছানার জন্য মনিব রুপী সৎ মার কাপড় চোপড় ধোয়া থেকে ঘর পরিস্কার করা তার প্রাত্যহিক কাজ। দুপুরের খর রৌদ্রে কৃষক বাবার হাল ধরে বাবাকে বিশ্রাম দেয়। হালের বলদ একটা । আরেকটা কেনার সামর্থ্য নাই। বাবার এই অসামর্থ মেয়েটি পুষিয়ে দেয় তার শরীর দিয়ে বলদের জায়গায় নিজে হাল টেনে। এই ধরনের মেয়েরা জগৎ, সংসার সমাজের কৃপা বঞ্চিত থাকে । কার ও মতে এরা সবার আগে হয় ভগবানের কৃপা বঞ্চিত। কিন্তু আমি বলি আমাদের এই মেয়েটি সবার আগে ভগবানের কৃপায় পুষ্ট হয়েছে । তা না হলে এত অনাদর, অত্যাচার অবহেলায় তার শরীরটি বেশ । মুখে একটা আলগা শ্রী আছে তার সাথে আছে অমলিন মুখের হাসিটি । পথিক রাস্তা অতিক্রম করতে করতে পিছনে ফিরে দেখে মেয়েটিকে বারে বারে । পথিক মনে মনে ভাবে কি দেখে দোয়া করে ও এইভাবে সিন্ডারেলা মেয়ের মত এর কপালে হয়তো রাজসুখ হবে কোনদিন। নামটি ও তার বেমানান গরীব ঘরের তুলনায়। নাজিয়া সুলতানা । কেউ ওকে দেখে দীর্ঘর্নিঃশ্বাস ফেলে ভাবে আহা যেন এক শাহজাদী তার কোন পুনর্জন্মের কোন ও পিতৃপুরুষের পাপে এই জনমে গরীব চাষা বাবার ঘরে জন্ম হয়েছে। ওর গ্রামের নাম চৌহট্রি।
সেই তুলনায় আমাদের এই ছেলেটি নায়কটি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে। ওর বাবা চাচাদের অনেক বিজনেস, দোকান, গাড়ির শোরুম, অলংকারের দোকান । এত বিশাল ধন সম্পদ এর কোন ও ভাগিদার নাই। বাবা, মা, চাচা, খালা মামা সবার ই নয়নের মনি ও। এত সম্পদ, প্রাচুর্য্যের মধ্যে থাকলে যে কোন ধনীর দুলালদের যেরকম স্বভাব চরিত্র খারাপ থাকে তা এ ছেলের না থাকলে ও কিছু খামখেয়ালী বিচিত্রতর স্বভাব তার মধ্যে ও বাসা বেঁধেছিল । সবসময় তাকে এক অস্থিরতা তাড়িয়ে বেড়ায় তার উপশম কি খুঁজে না পেয়ে বিষন্ন হয়ে থাকে ঘরের কোণে। তাকে হাসাতে, পছন্দের জিনিস করার জন্য সবধরনের বিচিত্রতর সামগ্রী দিয়ে ঘর পরিপুর্ন করে রাখে সবাই। শ্রেষ্ঠ হাসির কোন সিনেমা ওর সামনে চালিয়ে ওকে হাসানো সম্ভব না। বরং বিরক্ত মুখে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে যারা হাসতে থাকে। সাধারন মনোহারিনী বিনোদন কোন ও সামগ্রীর দিকে মনোযোগ নাই ওর । খাওয়া পরার দিকে মনোযোগ কম । একটা জিনিসে তার মনোযোগ আছে বলে তবু রক্ষা মা বাবা ভাবেন । বই পড়া । দিন রাত জেগে প্রচুর পড়ে । নাম ওর আবু বকর।এই পুরানো অনাধুনিক নাম আবু বকরের দাদার দেওয়া তাই কেউ আপত্তি করতে পারেননি।
ভবিতব্যে এই ধরনের মানুষরা মুখোমুখি হয় কোনদিন প্রকৃতির কোন ও গুড় উদ্দেশ্য সাধনে। আবু বকরদের কোম্প্যানী বড় একটা প্রজেক্টে কাজ করে যৌথভাবে আরব আমিরাতের বড় তেল খনন কোম্পানীর সাথে। ফাতেহ খনির সাথে মিলে বর্তমানে তারা বড় পুকুরিয়ার কয়লা খনির উত্তোলন এর কাজ টি হাতে নিয়েছে। আজ তাদের প্রথম দিন কাজের। বড় সকল ট্রাক্টর ইন্স্ট্রুমেন্ট নিয়ে সবাই উপস্থিত হয়েছে বড় পুকুরিয়ার কয়লা খনি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার চৌহট্রী গ্রামে । যত কাজ থাকুক না কেন দুপুরের সময়টাতে আবু বকরের অভ্যাস বই পড়া । এইজন্য এক গাড়ী বোঝাই করে তার পছন্দের সব বই নিয়ে এসেছে । দুপুরের রাস্তার এক কোণ পছন্দ করে বই খুলে বসলো পড়ার জন্য।একই সময়ে নাজিয়া এই সময়ে বাবার বলদের সাথে হাল চষার কাজ করছিলো । ক্ষেতের শেষ মাথায় আসতে ওর হাল চাষের গতি শ্লথ করে থেমে গেলো । আরেকটু হলে ক্ষেতে পড়তে যাচ্ছিল ও। নেমে পড়ে তাকিয়ে হাসলো এই লোকটির দিকে তাকিয়ে । এই গ্রামের সবাইকে চেনে সে। এ কে বুঝতে পারলোনা । আবু বকর ও এই প্রথম স্বভাবের ব্যাতিক্রম করে ই হেসে ফেললো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে। মেয়েটির চোখে মুখে এক অন্য ধরনের আভিজাত্য আছে যা গ্রামের গরীব ঘরের মেয়ের মধ্যে দেখা যায়না সচরাচর । মেয়েটির ব্যাক্তিত্বের দীপ্তি, সপ্রতিভ হাসি চোখের পলকে মুগ্ধ করে ফেললো ওকে । ও অনেকটা বোকার দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ। হঠাৎ ই সচেতন হয়ে দেখলো মেয়েটি বলদের সাথে হালের স্থানে দাড়ানো ।
"একি আপনি হালের জায়গায় দাড়ানো কেন" বিস্ময়ে আবু বকর জিজ্ঞাসা করলো ।
আরেকটা গরুর দরকার হাল চাষে, বাপজান কিনতে পারছেন না তাই আমি সাহায্য করি এই কথাটি ও বলল হাসি মুখে ।
ও আচ্ছা এই ব্যাপার । প্রথমে মুচকি হাসি আস্তে আস্তে তা অট্রহাসিতে পরিনত হলো তা হলো দ্বিতীয়বারের মত রেকর্ড ব্রেক কার মতই. আবার ও হাসলো । দ্বিতীয়বার হাসির সাথে এই ত্বড়িৎ সিদ্ধান্তে উপনীত হল তার মন এই বিস্ময়কে তার পাশে চাই একমূহূর্ত, দুই মূহূর্ত নয় জীবনের বাকী সকল মূহূর্তের জন্য।
আমাদের ট্রাক্টর আসবে একটু পরে আপনাদের জমি চাষ করতে । বিন্দুমাত্র চিন্তা করবেন না এ নিয়ে আপাতত এই বললো শুধু । বাকী ভবিষ্যতের কথা পরে বলা যাবে না হয়।
নটে গাছটিকে এখন ই মুড়িয়ে দেওয়ার দরকার নাই হাসি মুখে ভাবছে ও মনে মনে ।
------------------------
চমৎকার ব্লগ পেজটি। আমি কিছু লেখা পড়েছি।
উত্তরমুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ আমার এই লেখাটি শেয়ার করার জন্য।
শুভকামনা রইলো। 🖐❤️