একটি হারিয়ে যাওয়া পাখির গল্প
চন্দ্রমা মুখার্জী
১
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে থেকেই টুসু খুব খুশি। কারণ মা কাল রাত্রে বলেছে যে, "কাল তোরা বাড়ির বাইরে একা-একা ঘুরতে যাবি। কিন্তু অন্ধকার হওয়ার আগে ঠিক বাড়ি চলে আসবি। আর তিনজনে একসাথে থাকবি। কেউ কারুর কাছছাড়া হবি না।"
তিনজন বলতে ওরা তিন ভাইবোন – টুসি, টুসু আর টুসকি। টুসি হল টুসুর দিদি। টুসকি ওদের ছোট বোন। আর টুসু ওদের দুজনের ভাই।
তো সকাল হল। ওরা ঘুম থেকে উঠে দেখল, সূয্যিমামাও ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। এখন গায়ের লাল জামাটা ছেড়ে হলুদ জামাটা পরব-পরব করছে। এইসময়ই মা বলল, "এই নে, একটু খেয়ে নে। তারপর বেরিয়ে পড়।" ওরা তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
২
আজ ওদের আনন্দ দেখে কে। এতদিন শুধু বাড়ির বাইরেটায় মায়ের চোখের সামনে প্র্যাকটিস করত। আজ থেকে ওরা বড় হয়ে গেল। ওরা এবার দূরে দূরে ঘুরতে যাবে। টুসি আবার বড়দিদি বলে ওস্তাদি করে বলল, "এই তোরা দুজন ঠিক আমার পিছন পিছন আসবি। এদিক-ওদিক যাবি না একদম।" ও কথা শুনতে টুসুর ভারি বয়েই গেছে। ও তো একটা ছেলে নাকি। ওর-ই তো দায়িত্ব নাকি বোনেদের গার্জেন হওয়া। ও ঠিক একফাঁকে দুবোনের থেকে আলাদা পথে কেটে পড়ল।
৩
এতোক্ষণে নিশ্চয় তোমরা বুঝতে পেরেছো ওরা কে। নাকি এখনোও বোঝোনি। ও ওরা কি প্র্যাকটিস করত ভাবছো?
ওরা আসলে ওড়া প্র্যাকটিস করতো। ওরা তো পাখি। ছোট ছোট মৌটুসি পাখি। ওড়া ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়ায়।
৪
এবার আবার টুসুর কথায় আসা যাক। তো সারাদিন ও বেশ এই ফুল ঐ ফুলে মধু খেয়ে বেড়ালো। খুব মজা হল। টুসি আর টুসকিকে ভড়কি দিয়ে খুব জোর কাটানো গেছে যা হোক। ঐসব মেয়েগুলো ভীতু খুব। আরে আমার আবার কি হবে। আমি ঠিক সময়ে বাড়ি চলে যাব। মা কিছু ধরতেও পারবে না। আর বোনেরা যদি নালিশও করে তাতে কি, ও ঠিকমতো ফিরে এসেছে দেখলে মা আর বকতেও পারবে না। বরং খুশিই হবে যে, ও একা-একাই এতো জায়গা ঘুরে আসতে পেরেছে দেখে।
যাইহোক, এইবার বাড়ির দিকে রওনা দেওয়া যাক। সূয্যিমামাও দেখছি হলুদ ছেড়ে কমলা জামাটা গায়ে দিয়ে ঘুমোতে যাওয়ার তাল করছে। খানিকটা এদিক-ওদিক দেখে নিয়ে টুসু বোঝার চেষ্টা করল কোন্দিকে গেলে ওর বাড়ি পড়বে। কিন্তু ঠিক বুঝতে পারল না।
এবার ও চিন্তায় পড়ে গেল, কি করে বাড়ি ফিরবে ও। তারপরেই ও মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবতে লাগল যে কি করা যায়। ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এল। আচ্ছা আশেপাশের পাখিদের জিজ্ঞেস করি তো। পাশেই গাছের পাতার ফাঁকে একটা চড়ুই পাখি বসেছিল। দেখে মনে হল বয়স্ক। ও বলল, "দাদু, একটু বলতে পারবেন যে, বড় অশ্বত্থ গাছটা কোন্দিকে? আমি বাড়ি যাব। আমার বাড়ি ওখানে।" চড়ুইটা পিটপিট করে খানিকক্ষণ ওকে দেখে বলল, "বড় অশ্বত্থ গাছ তো এইদিকে অনেক আছে। তুমি কোন্ গাছে থাকো সেটা আমি কি করে জানবো।" "ঐ যে, যার মাথায় একবার বাজ পড়েছিল, মায়ের কাছে শুনেছি।" – টুসু বলল। "তা তো আমি চিনি না। তুমি বরং ঐ শালিকটাকে জিজ্ঞেস করো। তোমরা ছোটরা এতো পাকা হয়ে যাচ্ছো দিন-দিন যে কি বলব। দেখো আকাশ কালো করে ঝড়-বৃষ্টি আসছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি খুঁজে বাড়ি যাও। আমি বাড়ি গেলাম।" – এই বলে চড়ুইটা উড়ে গেল।
টুসু দেখল, চারপাশে সত্যিই অন্ধকার নেমে এসেছে। ওর এবার একটু একটু ভয় করতে লাগল। ও দেখল শালিক পাখিটা রাস্তার ধারে বসে আনমনে আকাশ দেখছে।
ও তার কাছে গিয়ে ডাকল, "মাসি আমাকে একটু বলো না বাজ পড়া অশ্বত্থ গাছটা কোন্দিকে।" শালিকটা বলল, "সে তো উত্তরে। তুমি তো পুবে এসে গেছো। অনেকটা দূর। তুমি বাছা এখন কি পৌঁছতে পারবে?" ও বলল, "খুব পারব। আপনি বলুন কি করে যাব।" শালিক বলল, "তুমি সামনে খানিকটা গিয়ে বাঁদিকে ঘুরে আরো খানিকটা এগোলেই বাড়ি পেয়ে যাবে।" "ধন্যবাদ মাসি আমি আসছি।" – বলেই টুসু জোরে জোরে উড়তে শুরু করল। "সাবধানে যেও বাছা।" – পিছনে শালিকের গলা ভেসে এল।
৫
টুসুকে যে করেই হোক বাড়ি পৌঁছতেই হবে ঝড়ের আগে। কিন্তু খানিকটা যাওয়ার পরেই দমকা হাওয়ায় ও কোথায় ছিটকে গেল। আর সেইসঙ্গে শুরু হল ঝেঁপে বৃষ্টি। টুসু কোথায় হারিয়ে গেল? ও কে কি আর পাওয়া যাবে? ও কি পারবে ওর বাড়িতে ওর মায়ের কোলে ফিরতে?
৬
ইস্, এমন বেরোবার মুখে ঝড়-বৃষ্টি এসে গেল যে, কলেজ থেকে বেরোতেই দেরি হয়ে গেল। বাড়ি পৌঁছতেই কতোটা দেরি হয়ে যাবে। এবার কখন-ই বা কালকের projectটা শেষ করব আর কখন-ই বা পড়তে বসব। - বাড়ি ফিরতে ফিরতে অটোয় বসে এসবই ভাবছিল দেবদত্তা। হঠাৎ সামনের সিগন্যালে অটোটা আটকে পড়ল। পাশেই একটা টগর ফুলের গাছ। রোজই যাওয়া-আসার পথে ও গাছটা দেখে। আর একটা তো নয়, ওদের সল্টলেকে তো প্রচুর গাছ। আজ দেখল গাছটা ঝড়ে সামনের রাস্তায় ঝুঁকে পড়েছে। আর তার একটা পাতার ফাঁকে ছোট্ট কালচে মতো কি একটা রয়েছে।
ও ভালো করে দেখার জন্য মুখ বাড়ালো। ওমা, এ তো নড়ছে। একটা ছোট্ট পাখি। সরু ঠোঁট মধু খাওয়ার জন্য। এদিক-ওদিক দেখছে। মনে হয়, ঝড়ে বাড়ি যাওয়ার পথ হারিয়ে ফেলেছে। নয়তো এই সন্ধ্যেবেলা তো এইসব পাখি দেখা যায় না।
পাখিটা হঠাৎ ঝুপ করে পড়ে গেল গাছের নিচে। দেবদত্তা বুঝে গেল ও কে কি করতে হবে। ও তাড়াতাড়ি ভাড়াটা দিয়ে দিল আর সিগন্যাল সবুজ হওয়ার মুখে নেমে পড়ল অটো থেকে। অটোওয়ালা বলল, "ও দিদি, তুমি তো সামনের স্টপে নামবে।" অটোওয়ালা ওর চেনা। ও বলল, "না দাদা, তুমি যাও। এটুকু আমি হেঁটেই চলে যেতে পারব।" সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছিল তাই অটোওয়ালা আর কিছু না বলে চলে গেল। ও তাড়াতাড়ি পাখিটাকে কুড়িয়ে হাতের মুঠোয় নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল।
৭
বাড়ি আসতেই দেখল, মা সন্ধ্যের আরতি করছেন আর ঠাম্মা নিজের ঘরে বসে একটা গল্পের বই পড়ছেন। বাবার ফিরতে দেরি আছে আর দাদাই খবরের চ্যানেল খুলে দালানে বসে আছেন।
ঠাম্মা ওকে দেখেই উঠে এলেন, "কি রে খুকু, তোর হাতে ওটা কি নড়ছে?" দেবদত্তা যার ডাকনাম খুশি, যাকে ঠাম্মা খুকু আর দাদাই দিদিভাই বলেন সে তাড়াতাড়ি দৌড়ে নিজের ঘরে ব্যাগটা রেখে এসেই বলল, "ঠাম্মা তোমার সেই পুরনো মুনিয়া পাখির খাঁচাটা বের করতো। কোথায় আছে?"
ওকে ছোটাছুটি করতে দেখে মা আর দাদাইও এলেন। দাদাই-ই ছাদের ঘর খুলে খাঁচাটা নিয়ে এলেন। ও সঙ্গে-সঙ্গে পাখিটাকে খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। বলল, "ঠাম্মা এটা কি পাখি জানো?"
ঠাম্মা বললেন, "মনে তো হচ্ছে মৌটুসি যার আরেক নাম দুর্গাটুনটুনি।" দাদু বললেন, "হ্যাঁ, Sunbird। এটা ছেলে পাখি, তাই Purple Sunbird। মেয়ে হলে হলদেটে হয়।"
খুশি তাড়াতাড়ি এক বাটি জল আর একটা বিস্কুট গুঁড়ো করে বাটিতে করে নিয়ে এসে খাঁচায় ঢুকিয়ে দিল। পাখিটা ভয় পেয়ে খাঁচার এক কোণে চলে গেল। খাবার আর জল ছুঁয়েও দেখল না। খুশি বলল, "ও তো কিছুই খাচ্ছে না, ভয় পাচ্ছে। এবার কি হবে? না খেলে তো ও মরে যাবে।" দাদু বললেন, "এসব তো ও খেতে পারবে না। দেখছো না দিদিভাই ওর তো সরু ঠোঁট। ও তো গাছে গাছে ফুলের মধু খেয়ে বেড়ায়। সেটা তো আমরা দিতে পারব না।"
খুশি দমে গেল। তারপর একটুক্ষণ ভেবেই ও খুশি হয়ে উঠল, "ঠাম্মা ছাদে আমাদের টগর গাছে তো এখন অনেক ফুল ফুটেছে। কয়েকটা যদি তুলে এনে ওকে দি তাহলে কেমন হয়?" ঠাম্মা বললেন, "দাও, তবে টাটকা ফুলই দিও। ঝরে পড়া ফুল দিও না। ওতে ওর লাভ হবে না।"
খুশি তাড়াতাড়ি ছাদে দৌড়লো। গিয়ে টগর গাছের কাছে গিয়ে চারটে ফুল ছিঁড়ে নিল আর মনে-মনে বলল, টগরসোনা, রাগ করিস না। ঐ মৌটুসি পাখিটাকে বাঁচাতেই কটা ফুল তুললাম। এতে তোর কষ্ট একটু হল, কিন্তু তুই তো আমার সোনা বন্ধু। তুই তো ওকে সাহায্য করবিই বল। টগর গাছটা একবার একটু দুলে উঠল, যেন ওর কথাতেই সায় দিল।
খুশি হয়ে ও ফুল নিয়ে নিচে চলে এল আর পাখির খাঁচায় জলের ওপর টাটকা ফুলগুলো রেখে দিল।
৮
অনেকক্ষণ ধরে গাছে আটকে থাকার পর যেই ঝুপ করে টুসু পড়ে গেল ওমনি একটা মানুষ এসে ওকে তুলে নিয়ে সোজা বাড়ি চলে গেল। টুসু তো খুব ভয় পেয়ে গেল। ওকে মা পইপই করে বলে দিয়েছিল, "আর যাই করিস না কেন, মানুষের থেকে দূরে থাকবি। ওরা খুব দুষ্টু হয়, ধরতে পারলেই খাঁচায় পুরে দেয়। তখন কিন্তু আর উড়তেও পারবি না, আর বাড়িও ফিরতে পারবি না, আর আমাদেরকেও দেখতে পাবি না।"
তারপর তো এই মানুষটা সত্যিই ওকে খাঁচায় পুরে দিল আর সঙ্গে জল আর কিসব খেতে দিল। ও ভয়ে এক কোণে সরে গেল। ওর চোখে জল এসে গেল। ও কি তাহলে আর কোনদিন মায়ের কাছে যেতে পারবে না, টুসি আর টুসকির সাথে খেলতে পারবে না?
৯
খুশি দেখল পাখিটার যেন কিরকম চোখগুলো ছলছল করছে। ও তখন খাঁচার সামনে মুখটা এনে বলল, "ভয় পেয়ো না, সোনা পাখি। কাল সকালে আমি তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেব। তুমি যাতে খারাপ কোন জন্তুর শিকার না হয়ে যাও তাই তো তোমায় তুলে নিয়ে এলাম। তুমি তো মনে হচ্ছে হারিয়ে গেছো।"
এই কথা শুনে টুসু কি বুঝল টা কে জানে। তবে সামনে টগর ফুল দেখে ওর এতোক্ষণে খিদে-তেষ্টার কথা মনে এল। ও আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে একটা ফুল থেকে মধু খেতে লাগল। খেতে বেশ ভালই লাগল। এইভাবেই সব ফুল থেকেই ও মধু খেয়ে নিল। তারপর ও চিঁচিঁ করে ডাকতে লাগল। বলতে লাগল আমি মার কাছে যাব।
১০
এতোক্ষণে বাবাও ফিরে এসেছেন। সবটা শুনলেন, পাখিটাকে দেখলেন। তারপর বললেন, "তা তুই ওর বাড়ি কি করে খুঁজে পাবি খুশি?" মা বললেন, "তোর তো কাল কলেজও আছে। Project জমা করতে হবে।"
খুশি বলল, "আমি রাত জেগে করে নেব। আর সকালে একটু আগে বেরোবো। খাঁচাটা নিয়েই যাব। আমার যতোদূর মনে হচ্ছে পাশের ব্লকের ঐ বাজ পড়া অশ্বত্থ গাছটাই ওর বাড়ি হতে পারে। কারণ যাওয়া-আসার পথে ঐ গাছটায় আমি প্রায়ই এরকম দেখতে পাখি দেখতে পাই। ওকে ছেড়ে দিয়ে আমি খাঁচাটা বাড়ি দিয়ে কলেজ চলে যাব। আর যদি ওর বাড়ি না পাই, যতদিন না ওর বাড়ি খুঁজে পাই এরকম আশেপাশে নিয়ে ঘুরবো। ওর বাড়ি ঠিকই আমি পেয়ে যাব। এইটুকু পাখি আশপাশ থেকেই এসেছে। বেশিদূর থেকে আসতে পারবে না।"
যাইহোক, রাতে ঘুমোতে চলে গেল। খুশিও ওর Project শেষ করতে ঘরে চলে গেল। দালানে রইল শুধু টুসু। ওর আজ আর ঘুম এল না। খালি মায়ের কথা মনে পড়ছে। এই মানুষগুলোকে তো দেখে খারাপ মনে হল না। এরা কি সত্যিই ওকে বাড়ি পৌঁছে দেবে? ভাবতে ভাবতে কখন যে ওর চোখ জুড়িয়ে এল ও নিজেই বুঝতে পারল না।
১১
এদিকে টুসি আর টুসকি কখন ফিরে এসেছে।এসেই মাকে জানিয়েছে ভাই পালিয়ে গেছে। মা তো রেগে কাঁই। আসুক বেয়াদব ঘরে, খুব মারব আজকে।
কিন্তু কোথায় কি, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল, ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে শেষও হয়ে গেল। তবু টুসুর আসার নাম নেই। মা এবার চিন্তায় পড়ল। মনে-মনে বলতে লাগল, ঠাকুর আমার ছেলেটাকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে দাও। আমি ওকে মারবো না, বকবোও না। সন্ধ্যে থেকে রাত হয়ে গেল। চিন্তায় চিন্তায় মা সারারাতে একবারও দুচোখের পাতা এক করতে পারল না।
১২
সকাল হয়ে গেছে। এদিকে মা গাছের সবাইকে ডেকে বলছে টুসুর হারিয়ে যাওয়ার কথা। সবাই ঠিক করল ভাগাভাগি করে এদিক-ওদিক খুঁজতে যাবে। নিশ্চয়ই ঝড়ে কোথাও আটকে পড়েছে।
ওদিকে খুশিরা সবাই ভোর-ভোর উঠে পড়েছে। তাড়াতাড়ি করে তৈরি হচ্ছে মৌটুসিকে ছাড়তে যাবে বলে। টুসুও ঘুম থেকে উঠে চুপচাপ সব দেখছে। খুশি তৈরি হয়ে খাঁচাটা আর টাকার ব্যাগটা দুহাতে নিয়ে "ঠাম্মা, আমি আসছি" বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। ঘড়িতে সবে ৬টা, কিন্তু পাখিদের জন্য এটাই সাতসকাল। ও খাঁচাটা নিয়ে এগিয়ে চলল সেই বাজ পড়া অশ্বত্থ গাছটার দিকে আর লক্ষ্য করতে লাগল যে, পাখিটার মধ্যে কোন উত্তেজনা বা পরিবর্তন আসছে কিনা।
১৩
বাজ পড়া গাছটার কাছে খুশি আসতেই টুসু খাঁচার মধ্যে চিঁচিঁ করে ডাকতে লাগল আর সেইসঙ্গে লাফাতে লাগল। খুশি বুঝে গেল যে ঠিক জায়গাতেই সে এসেছে।
ও এবার খাঁচার দরজাটা খুলে দিল আর টুসু ছিটকে বেরিয়ে এসে গাছের দিকে উড়ে গেল। খুশির মনটা শান্ত হল, যাক ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল। ও খাঁচার দরজাটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গাছটায় টুসুকে খুঁজতে লাগল।
১৪
টুসু বাড়ি এসেই মা-মা করে চিৎকার করতে লাগল। ওর চিৎকার শুনে মা, টুসি, টুসকি আরও আশেপাশের সবাই বেড়িয়ে এল।
মা বলল, "পাজি ছেলে, কোথায় চলে গিয়েছিলি আমাক না বলে। আর কখনো যাবি?" মায়ের চোখে জল। টুসুরও তাই। ও ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল আর কাল থেকে ওর সাথে যা যা হয়েছে সব বলল। শেষে বলল, "মা সব মানুষ খারাপ হয় না। ঐ মানুষটা আর ওর বাড়ির বাকি মানুষগুলোও সবাই খুব ভালো।"
মা বলল, "চল্ তো দেখি মানুষটাকে।" আমি তাকে কিছু উপহার দিতে চাই।"
খুশি এইবার পিছন ফিরে সবে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে, তখনি পিছন থেকে চিঁচিঁ আওয়াজ শুনে ঘুরে দাঁড়াল আর যা দেখলো তাতে অবাক হয়ে গেল।
নীল মৌটুসি পাখিটার সাথে আরও তিনটে হলদেটে মৌটুসি পাখি আসছে। দাদু বলেছিলেন, ওগুলো মেয়ে পাখি। একটা একটু বড়। মনে হয় ওদের মা। মুখে করে কি একটা এনে ওর হাতের ওপর বসল। তারপর ঠোঁট থেকে সেটা ওর হাতে দিয়ে দিল। ও দেখল চটচটে মতো কিছু – ফুলের মধু যাকে বলে Nectar। এই পাখিগুলোর খাবার। তারপর চিঁচিঁ করে কি যেন বলে আবার সবাই মিলে উড়ে চলে গেল।
কিন্তু কি বলে গেল তা বুঝতে ওর একটুও কষ্ট হল না। বলে গেল, ধন্যবাদ আমার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য আর সুস্থভাবে ওকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
খুশিও হাতে ওই ফুলের মধু মেখে খুশিমনে এবার বাড়ির দিকে হাঁটা দিল, গিয়ে আবার কলেজ যেতে হবে, Project জমা করার দিন।
ছবিঋণ - ইন্টারনেট।
=====================
নাম - চন্দ্রমা মুখার্জী

